somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরীসৃপতন্ত্রঃ চ্যাপ্টার ১৩

০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৯ নভেম্বর, ১৯৮৭, সকাল ১০টা ৪৯

সেদিন সকালে মোকামদের পত্রিকা অফিসে এসেছিলেন আনিস ভাই। আনিস চৌধুরী। লম্বা চওড়া ডাকাবুকো মানুষ। গায়ের রঙ এতোটাই টকটকে ফরসা যে, অতিরিক্ত শীত কিংবা গরমে তার গালে লাল আভা দেখা দেয়। ভারী কণ্ঠ। দরাজ গলায় দারুণ কবিতা আবৃত্তি করতে পারেন। তবে এসবকিছু ছাপিয়ে যে কারনে তিনি বিখ্যাত, তা হল তিনি বাঘ গবেষক। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ওপর গবেষণা করে তিনি তার তারুণ্যের এক বড় অংশ কাটিয়েছেন। বহুবার গিয়েছেন সেই হায়ওয়ান আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাহফিলে। সর্বজন স্বীকৃতি এ বাঘ বিশারদ পত্রপত্রিকায় সুন্দরবন আর রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ওপর কলাম লেখেন মাঝেমধ্যেই।

পত্রিকায় কলাম বা ফিচার লিখে যারা সম্মানি পান, তিনি তাদের মধ্যে সবচে ধারাবাহিক। প্রতি লেখাতেই একটা খাম জোটে তার ভাগ্যে। মোকামদের পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে তার অত্যন্ত অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। সেদিন আনিস চৌধুরী যখন সম্পাদকের রুমে এসে ঢুকলেন, মোকাম তখন রিপোর্টে বের হবার আগে চূড়ান্ত কিছু দিক নির্দেশনা নিচ্ছিল সম্পাদকের কাছ থেকে।

গায়ে হাওয়াই শার্ট, গাঢ় নীল ডেনিমের জিন্স, মাথায় হ্যাট, চোখে সানগ্লাস - এই বেশে সম্পাদকের দরজা দিয়ে শরীরের অর্ধেক ঢোকানো মাত্রই সম্পাদক মহোদয় উৎফুল্ল কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠলেন - "আরে আনিস যে! আসো আসো, ভিতরে আসো,"

মোকাম সঙ্গে সঙ্গে উঠে পেছনের সোফায় গিয়ে বসলে আনিস চৌধুরী এসে বসেন সম্পাদকের মুখোমুখি। তারা দু'জন বাঘ নিয়ে আলাপ করেন দীর্ঘক্ষণ। সম্পাদক কাগজ ছিঁড়তে ছিঁড়তে আনিস চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করেন তার সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবন ভ্রমণের অভিজ্ঞতার ইতিবৃত্ত।

"সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কইমা যাইতেছে না, দিনকে দিন?"

"হ্যাঁ," সম্পাদকের প্রশ্নে আনিস চৌধুরী উত্তর দেন। "আমার নতুন লেখাটা পড়েছেন নাকি ভাই? কালান্তর পত্রিকায় এ সপ্তাহে ছাপা হওয়া আমার কলামটায় আমি এ বিষয়েই বিস্তারিত আলোচনা করেছি।"

"আরে নাহ," সম্পাদক টেবিলে হাত বাড়িয়ে নতুন কাগজ তুলে নেন ছেঁড়ার জন্য। "সম্প্রতি ন্যাশনাল জিওগ্রাফির একটা রিপোর্ট পড়লাম সুন্দরবনের উপর। ঐখানে লেখা ছিল যে হরিণের সংখ্যা কমতেছে সুন্দরবনে।" ফ্যাশ করে একটানে কাগজ ছিঁড়ে সম্পাদক বলেন, "বাঘ তো বানর খাইয়া বাঁচে না। ওদের দরকার হরিণের মাংশ।" তারপর, আনিস চৌধুরীর খুব কাছাকাছি এসে বলেন, "অথবা মানুষের মাংশ। কিন্তু তোমরা তো অনেক সতর্ক। গবেষণা চালাও। গবেষণা শেষ কইরা চইলা আসো। সেই গবেষণা প্রকাশ করো। তবে বাঘের পেটে যাও না। বাঘ না পায় হরিন খাইতে, না পায় মানুষ খাইতে। পর্যাপ্ত খাওন না পাওয়ার কারনে সংখ্যায় কমতেছে ওরা দিনকে দিন। বংশবৃদ্ধি হইতেছে না," আবার হেলান দিয়ে বসেন তিনি তার রিভলভিং চেয়ারে।

"ভাইয়ের কি আজকে কোন কারনে মন খারাপ নাকি?" আনিস চৌধুরী সম্পাদকের হেঁয়ালিপূর্ণ কথার তরজমা করতে না পেরে বলেন।
"মন তো ভালো থাকার কোন কারন নাই," সম্পাদক মুখ গম্ভীর করে বলেন। "ঢাকা শহর ছাগলে ভইরা যাইতেছে। এই ছাগলগুলিরে ধইরা সুন্দরবন পাচার করতে পারলেও হইত। তাতে কইরা বাঘের প্রোটিনের সরবরাহ জারি থাকতো। ওরা আবার খুশিমনে বংশবৃদ্ধি করা আরম্ভ করতো।" কাগজ বাদ দিয়ে সম্পাদক মহোদয় এবার টেবিলের ওপর থাকা পেপারওয়েট বনবন বনবন করে ঘোরাতে থাকেন। "রয়েল বেঙ্গল টাইগারের লিবিডো যদি এইভাবে কমতে থাকে তাইলে তো মহা মুশকিল। ওগো তো আর সেক্স করার প্রয়োজনীয়তার উপর লেকচার দিয়া কিছু বুঝানো সম্ভব না। এদিকে এখন ঢাকা শহর ভর্তি ছাগলে। এরপর ছাগল দিয়া দেশ ভইরা যাইব।"

তারপর তারা আলাপ করেন আনিস চৌধুরীর সাম্প্রতিক সময়ের একক আবৃত্তি অনুষ্ঠানগুলো নিয়ে। মোকাম পেছনে বসে উশখুশ করতে থাকে। তার বেরিয়ে পড়া দরকার এখনি। আজ তার প্রথম রিপোর্ট। কাজটা সে সময় আর যত্ন নিয়ে করতে চায়। তবে আনিস চৌধুরী ইন্টারেস্টিং মানুষ। বাঘের গল্প একটা ইস্যু তো বটেই, আবৃত্তি করেন বলে কথাও এতো গুছিয়ে বলেন যে সে কথাও শোনা যায় খালি বসে বসে। আনিস চৌধুরীর বচনে জানা গেলো, শিল্পকলা একাডেমী আর বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্রে গত মাসের শেষ দুটি শুক্রবার রাতে তার একক আবৃত্তি অনুষ্ঠান হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সাদি মোহম্মদের সঙ্গে ছিল তার যুগল পরিবেশনা। সামনের সপ্তাহে আনিস কলকাতায় যাবেন আবৃত্তির কাজে, তারপর সুন্দরবনের পশ্চিমবঙ্গের সাইডটায় সপ্তাহ দুয়েক ঘুরে ফিরে ফেরত আসবেন ঢাকায়।

"একটা কবিতা আবৃত্তি কইরা শুনাও, আনিস।" সম্পাদক অন্যমনস্ক সুরে বলেন, যেন মুখে বলছেন বটে কথাটা, কিন্তু ডুবে আছেন অন্য কোন চিন্তায়। "ঐযে ঐটা, সৈয়দ হকের ঐ কবিতাটা ..." কবিতার নাম মনে করতে না পেরে তিনি গরগরিয়ে আবৃত্তি করতে থাকেন -

আমি জন্মেছি বাংলায়, আমি বাংলায় কথা বলি
আমি বাংলার আলপথ দিয়ে হাজার বছর চলি ...
আনিস চৌধুরী তারপরের লাইন থেকে আবৃত্তি করা শুরু করেন -

চলি পলিমাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে।
তেরো শত নদী শুধায় আমাকে কোথা থেকে তুমি এলে?
...
আমি যে এসেছি জয়বাংলার বজ্রকণ্ঠ থেকে।
আমি যে এসেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে।
এসেছি আমার পেছনে হাজার চরণচিহ্ন ফেলে।
শুধাও আমাকে, এতদূর তুমি কোন প্রেরণায় এলে?

এভাবে, পুরোটা কবিতা আবৃত্তি করে শেষ করার পর দুজনেই চুপচাপ বসে রইলেন কিছুক্ষণ। সম্পাদক প্রায় ধ্যানমগ্ন। চোখ বন্ধ করে দুহাত মুঠো করে টেবিলের ওপর রেখে, সেই হাতের ওপর থুতনি ঠেকিয়ে বসে আছেন তিনি। দুলছেন অল্প অল্প।

"আপনাদের পত্রিকাটা মুক্তিযুদ্ধের আগে পরে আমাদের লিডারের ভ্যানগার্ড ছিল, ভাই। লিডার স্নেহ করতেন আপনাকে। পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তিনি আপনাদের এই পত্রিকার।" আনিস চৌধুরী দীর্ঘ সময় পর নীরবতা ভাঙ্গেন। মোকাম প্রায় উঠেই যাচ্ছিল। আনিস চৌধুরীর এই আলাপ শুনে সে আবার বসে পড়ে। "অথচ ১৯৭৫ সালের ১৬ অগাস্ট সকালে আপনার পত্রিকা প্রথম পাতায় সম্পাদকীয় লেখা হল - বাংলাদেশের ঐতিহাসিক নবযাত্রা নামে।" এই পর্যন্ত বলে আনিস চৌধুরী আর কথা আগান না। কামরা জুড়ে খুব ঢিমে লয়ে ঘুরতে থাকা ফ্যানের ক্যাঁচ ক্যাঁচ ক্যাঁচ আওয়াজ। শীত হলেও সম্পাদক তার কামরার ফ্যান কখনো বন্ধ করেন না। "এই রকম একটা সম্পাদকীয় আপনাদের পত্রিকা তখন কেন ছাপালো - এটা জানার আগ্রহ আমার দীর্ঘদিনের।" অনেক সময় নিয়ে নিজের কথা গুছালেন আনিস।

"তুমি জানতে চাও যে এই কাজ ... আই মিন ... নিমকহারামি ... হ্যাঁ, তোমাদের কাছে তো নিমকহারামিই ... আমি কেন করছিলাম, লিডারের কৃপাদৃষ্টি পাওয়া এক পত্রিকার সম্পাদক হয়ে?"

আনিস ঘাবড়ে যান সম্পাদকের ঠাণ্ডা কণ্ঠস্বর শুনে। এই পত্রিকায় লেখা কলামের টাকায় তিনি সপ্তাহে একবার চিতল মাছের পেটি দিয়ে ভাত খান প্রেসক্লাবের উল্টোদিকের রসনা রেস্তোরায়।

"আমি বরং একটা গল্প বলি তোমারে। গল্প না, আবার গল্পও। আবার এইটারে একটা জোক বা একটা চুটকিও মনে হইতে পারে। দেখো, হাসতে পারো কিনা। গল্প শেষে আমার একটা প্রশ্ন থাকবে। সেই প্রশ্নের উত্তরে তুমি তোমার প্রশ্নের উত্তর খুইজা পাবা।"

এই বলে সম্পাদক হাতে তুলে নেন বেশ কয়েকটা কাগজের মোটা একটা বান্ডেল। টেনে ছেঁড়ার চেষ্টা করতেই তা ফরফর করে ছেঁড়া যায় না আগের দু' এক পৃষ্ঠার মতো। বেশ শক্তি খরচ করতে হয়। সম্পাদক কাগজের দু'প্রান্ত ধরে প্রাণপন চেষ্টা করেন ছিঁড়ে ফেলার। কিন্তু তা সম্ভব হয় না। মোকাম, আনিস চৌধুরী, দুজনেই টেনশন সহকারে তাকিয়ে থাকে সম্পাদকের কাগজ ছেঁড়ার কসরতের দিকে। সম্পাদক বান্ডেলের মাঝামাঝি নিজের জিভের আগা ঠেকিয়ে জায়গাটা একটু ভিজিয়ে নেন। তারপর একটানে তা ছেঁড়া যায় সহজেই। মোকাম আর আনিস চৌধুরী দু'জনেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। সম্পাদক ফিরে যান তার গল্পে। বা, চুটকিতে।

জার শাসিত রাশিয়ায় রাজার শাসনের বিরুদ্ধে কোন কর্মকাণ্ডে প্রকাশ্যে বা গোপনে যারা জড়িত থাকতো, বা যারা কোন ষড়যন্ত্রমূলক কাজ করতো, রাজা তাদেরকে নানাভাবে শাস্তি দিতো তার অনুগত সৈন্যবাহিনী দিয়া। তাদেরকে না পাইলে কখনো কখনো তাদের পরিবারের সদস্যদের উপরেও নিপীড়ন চালাইতো, সব ডিকটেটররাই যা করে আর কি।

১৯ শতকের শেষ দিকে নিকোলাই অ্যালেক্সিভিচ নামে খুব মায়াদয়াহীন এক আর্মি জেনারেলের হাতে তৎকালীন জার তার রাজ্যে উদ্ভূত বিদ্রোহীদের দমন করার দায়িত্বভার অর্পণ করেন। রয়েল আর্মিতে জয়েন করার আগে সে সেন্ট পিটার্সবার্গ ইউনিভার্সিটিতে ম্যাথমেটিকসে গ্রাজুয়েশন করে। এই উচ্চশিক্ষিত আর্মি জেনারেল বন্দীদের পেটের থেকে কথা বাইর করার জন্য শাস্তি দেয়ার নানা ক্রিয়েটিভ উপায় খুইজা বাইর করতো।

একবার রাষ্ট্রবিরোধী, তথা জার বিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অপরাধে তিন ব্যক্তির নামে শমন জারি করা হইলে তারা গা ঢাকা দেয়। জারের গোয়েন্দাবাহিনী তাদের আর খুইজা বের করতে পারে না। ধইরা নেয়া হয় যে তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেসে। অ্যালেক্সিভিচ সোজা আঙ্গুলে ঘি তুলতে না পাইরা আঙ্গুল বাঁকানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তিন কুতুবের বৌদের ধইরা নিয়া আসা হয় হাজতে। তারপর, কয়েকদিন যাওয়ার পরেও যখন তারা স্বপ্রণোদিতভাবে আইসা ধরা দেয় না, তখন তাদের বৌদের উপর সে খুব ইন্টারেস্টিং কায়দায় টর্চার শুরু করে।

একটা তিনকোনা টেবিল বানানো হয় অর্ডার দিয়া। তার তিন মাথায় তিন মহিলারে ঠেশ দিয়া উপুড় করা হয়। বলা হয়, এখন তাদের পেছন থেকে লাগানো হবে। এই লাগানোর কায়দার মধ্যে অ্যালেক্সিভিচ তার গনিতের কেরদানি দেখায়। সে একটা ধাঁধাঁ সেট করে। তিন মহিলারে লাগানোর জন্য উপস্থিত ছিল টোটাল পাঁচজন পুরুষ। তাদের মধ্যে তিনজন সাদা, আর দুইটা নিগার। এই পাঁচজনের মধ্যে কেবল তিনজনই তাদের পেছন থেকে লাগাবে। প্রত্যেক মহিলাই তার সামনের দুই মহিলারে এবং তাদের যারা লাগাইতেছে, সেই ব্যাটাদেরকে দেখতে পাবে। কিন্তু নিজের পিছে কে আছে, সেইটা দেখতে পাবে না। এইভাবে, যে এই ফাকারদের কম্বিনেশন দেইখা এ ব্যাপারে সবার আগে সিদ্ধান্ত পৌঁছাইতে পারবে যে, তারে যে লাগাইতেছে, সে সাদা না কালো - অমনি তারে ছাইড়া দেয়া হবে। তবে কাজটা আন্দাজে করা যাবে না, করতে হবে ক্যালকুলেট কইরা। কারন পুরুষের গায়ের রঙ যেহেতু কেবল দুইটা, সাদা এবং কালা, কাজেই আন্দাজ করলে ৫০ - ৫০ সম্ভাবনা থাকে ঢিল লাইগা যাওয়ার। অ্যালেক্সিভিচ সেই আন্দাজে ঢিল ছুড়া বন্ধ করার জন্য আরেকটা নিয়ম অ্যাড কইরা দিছিল, ভুল কালার বললে সঙ্গে সঙ্গে ফায়ারিং স্কোয়াডে পাঠাইয়া দেয়া হবে। বাঁচতে চাইলে অঙ্ক কইরাই বাঁচতে হবে।

অতঃপর শুরু হইলো অ্যালেক্সিভিচের এক্সপিরিমেন্ট। টানা অনেকক্ষন রামঠাপানোর পর তিনজনই অজ্ঞান হইয়া গেলো। কেউ উত্তর দিতে পারল না। এই দিনের মতো কইরাই কাইটা গেলো টানা আড়াই মাস। একদিন পরপর প্রতিদিন চলতো মেয়েগুলির ওপর এই টর্চার।

একদিন, এক রাতের বেলা, অন্ধকার কুঠুরিতে তারা তিনজন মহিলা শুইয়া ছিল পাশাপাশি। হঠাৎ একজন আরেকজনের কাঁধে হাত রাইখা বলে, শুনো, আমারে প্রতিদিনই একটা সাদা ব্যাটা ঠাপায়। তোমারে ঠাপায় আরেকটা কালা ব্যাটা। আর ঐ সাইডের ঐ মেয়েটার পিছনে থাকে একটা সাদা ব্যাটা।

যারে সে তথ্যটা দিলো, সে তো দারুণ অবাক। সে জিজ্ঞেস করল, তুমি এইটা বাইর করলা কেমনে?

তখন সেই মেয়েটা তারে পুরা হিসাবটা বুঝাইয়া বলল। বলল যে, এই লাগালাগি শুরু হওয়ার আগেই, যখন পুরা ম্যাথমেটিক্যাল সমস্যাটা আমাদের সামনে বলা হইতেছিল, তখনি, এইটার অন্তত দুইটা সমাধান আমার মাথায় সঙ্গে সঙ্গে চইলা আসছিল।

পজিশন একঃ আমি ছাড়া তোমাদের দুইজনের পিছনেই দুইটা কালা ব্যাটা। তাইলে আমার পিছনে থাকবে একটা সাদা ব্যাটা। কারন নিগার তো দুইটাই, আর তারা দুজনেই তোমাদের পিছে।

এই পজিশনে একবারও আমাদের ফাকানো হয় নাই।

অথবা, পজিশন দুইঃ তোমার পিছনে একটা কালা ব্যাটা, আরেকজনের পিছনে একটা সাদা ব্যাটা। ফলে আমার পিছনে সাদা কিংবা কালা - দুই রঙের ব্যাটারই থাকার সম্ভাবনা।

আমি ঐ অন্য মেয়েটারে খেয়াল করি, যার পিছনে একটা সাদা ব্যাটা থাকে সবসময়। যেহেতু তোমারে একটা কালো ব্যাটা লাগাইতেছে, এখন আমার পিছেও যদি একটা কালো ব্যাটাই থাকতো, তাইলে ও এইটা দেইখাই বইলা দিতে পারত যে ওর পিছনের জন সাদা। যেহেতু ও তা করে নাই, তার অর্থ আমার পিছনে কালো না, বরং একটা সাদা ব্যাটা আছে। এইভাবেই সমস্যা সমাধান করলাম।

অন্য মেয়েটা যারপরনাই অবাক হইয়া প্রশ্ন করল - তুমি কি এইটা আজকে আবিষ্কার করলা?

সে বলল, আগেই তো বলছি, প্রথম দিন থেকেই এই সমস্যা সমাধানের উপায় আমি জানতাম। এইটা একটা গাণিতিক সমস্যা, আর আমি অঙ্কে ভালো।

তোমার অঙ্কের মাথা এতো ভালো, তবুও তুমি সঙ্গে সঙ্গে উইঠা গেলা না কেন?

সমস্যা অন্য জায়গায়। সমস্যা আমার জামাইয়ের।

অপর মেয়েটা দারুণ অবাক। জামাইয়ের সমস্যা বলে সে এভাবে শুয়ে শুয়ে ফাকানো সহ্য করবে?

আমার জামাই আমারে খাওয়াইতে পারে না। বেতন পায় না প্রায় মাসেই। হাগা হয় না বইলা একবার ডাক্তারের কাছে নিয়া গেছিলাম। ডাক্তার প্রফেশন শুইনা ওরে কয়েকটা রুবল ধরায়া দিয়া কইছিল আগে দোকানে গিয়া একটা রুটি কিনা খাও। পেটে কিছু না থাকলে হাগা আসবে কোত্থেকে? বাড়িতে খাওয়া না থাকলেও জার মহারাজের কৃপায় এইখানে দুই বেলা না খায়া থাকা লাগতেছে না।

অপর মেয়েটা চোখ কপালে তুইলা বলল, ব্যস, এই কারন?

গণিত বিশারদ মেয়েটা বলল, কারন আরও আছে। আশায় আছি, একদিন তোমার ভাগ্য আমার হবে। তোমার ঐ কালো ব্যাটা আমার পিছনে আইসা দাঁড়াবে। ক্ষুধার জ্বালায় লিবিডোর তাড়নাবিহীন যে রাতগুলি আমি কাটাইছি আমার জামাইয়ের সাথে, সে দুঃখ ঐ কালো ব্যাটার ঠাপ জীবনে অন্তত একবার না খাইলে আমি ভুলতে পারব না।

"আমার গল্প এখানেই শেষ, আনিস।" সম্পাদক টেবিলে কলমের ডগা দিয়ে ঠুক ঠুক করে ঠোকা দিতে দিতে বলেন "একটু অশ্লীল ছিল। সে যাক। আপনি তো জ্ঞানী মানুষ। আন্দাজ করেন তো, ঐ মেয়েটার হাসবেন্ডের প্রফেশন কি ছিল?"

মোকাম, আনিস চৌধুরী চুপ করে বসে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×